খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইনজীবী আলিফ হত্যা : ভিডিও দেখে শনাক্ত ১৩ জন, গ্রেপ্তার ৭

দেড়যুগ পর দৌলতপুর থানা বিএনপির সম্মেলন, উজ্জীবিত একাংশের নেতাকর্মীরা

একরামুল হোসেন লিপু

দেড়যুগ পর ৩ ডিসেম্বর দৌলতপুর থানা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের একাংশের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত, উৎফুল্ল এবং উচ্ছ্বসিত হয়েছে। বিএল কলেজ রোডে অবস্থিত দলীয় কার্যালয় প্রতিদিন নেতা-কর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হচ্ছে। সড়ক, মহাসড়কে শোভা পাচ্ছে শীর্ষ তিনটি পদে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের প্যানা, ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টার।

সম্মেলনের সফলতা কামনা করে খুলনা-যশোর মহাসড়কের দৌলতপুর ট্রাফিক আইল্যান্ড, বিএল কলেজ এবং সরকারি মুহসিন হাই স্কুলের সামনে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খুলনা-৩ আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী রকিবুল ইসলাম বকুলসহ সম্মেলনের নেতৃত্ব প্রত্যাশী কয়েকজনের ছবি সম্বলিত তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে ৫ টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও আড়ংঘাটা ইউনিয়ন বিএনপি’র সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে থানা বিএনপি’র নেতৃত্ব প্রত্যাশী শীর্ষ তিনটি পদে ৬ জনের নাম বেশ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। এদের মধ্যে সভাপতি হিসেবে বর্তমান থানা বিএনপি’র আহবায়ক সাবেক যুবনেতা মুর্শিদ কামাল, দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মোঃ সিরাজুল হক নান্নু ও শরিফুল আনাম।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে বর্তমান থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক ছাত্রনেতা শেখ ইমাম হোসেনের নাম। সাংগাঠনিক সম্পাদক হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা জাহিদ হাসান খসরু ও মোঃ মতলুবুর রহমান মিতুলের নাম।

এদিক গত ২৪ নভেম্বর মহানগর বিএনপি’র সর্বশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী থানা সম্মেলনে ওয়ার্ড বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি , সাধারন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কেউই থানা বিএনপি’র সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অংশগ্রহন করতে পারবে না। যদি কেউ অংশগ্রহন করেন তাকে অবশ্যই বর্তমান পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৯ সালে দৌলতপুর থানা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মোশাররফ হোসেন ও মোঃ সিরাজুল হক নান্নু।

সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের একযুগ পর মহানগর বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়। এরপর ২০২২ সালে দলীয় নেতা-কর্মীদের মতামত এবং ভোটের মাধ্যমে মুর্শিদ কামাল আহ্বায়ক ও শেখ ইমাম হোসেন সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। উক্ত আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ বিগত দুই বছর প্রশাসন ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের রক্তচক্ষু, হামলা, মামলা উপেক্ষা করে হাসিনা হটাও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দীর্ঘ দেড় দশক আওয়ামী লীগের শাসনামলে দলীয় নেতা-কর্মীরা একাধিক মামলায় জর্জরিত ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠান তো দূরের কথা মামলা, হামলার ভয়ে দলের শীর্ষ নেতারা নিজেদের আত্মগোপনে রাখতে ব্যস্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন দলীয় কার্যালয় ছিল তালাবদ্ধ। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসতে সাহস পেতো না কেউ। সর্বশেষ ৪ আগস্ট বিএল কলেজ রোডে অবস্থিত থানা বিএনপির প্রধান কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পলায়নের পর সারা দেশের ন্যায় দৌলতপুর থানা বিএনপি’র নেতা-কর্মী, সমর্থকরাও ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত, উৎফুল্ল এবং উচ্ছ্বসিত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলীয় বিভক্তির কারণে দীর্ঘদিন কোণঠাসা হয়ে থাকা মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু গ্রুপের অধিকাংশ নেতা-কর্মী সমর্থকদের এ সম্মেলনের সাথে কোন সম্পৃক্ততা নেই।

তবে নজরুল ইসলাম ইসলাম মঞ্জুর অনুসারী দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ সিরাজুল হক নান্নু তার সমর্থকদের নিয়ে এ্যাডঃ শামসুল হক মানা ও শফিকুল আলম তুহিন গ্রুপের সাথে একত্রিভূত হয়ে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন এবং তিনি নিজেও সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারী দৌলতপুর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন ও অধ্যাপক মোঃ তরিকুল ইসলামসহ দলের একটি অংশ সম্মেলনের বাইরে রয়েছেন।

খুলনা গেজেটকে মোঃ সিরাজুল হক নান্নু বলেন, অতীতের দলীয় কোন্দলসহ সকল প্রকার দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভূলে আমরা একত্রিভূত হয়ে ৩ ডিসম্বর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছি। সম্মেলনে কাউন্সিলর হিসেবে আমাদের যারা অনুগত নেতা-কর্মী ছিলেন তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

দৌলতপুর থানা বিএনপি’র সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, দীর্ঘ দেড়যুগ পর দৌলতপুর থানা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে । এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে ৬ টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। বন্টন করে দেওয়া হয়েছে তাদের দায়িত্ব। সম্মেলনে বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মীর উপস্থিতি এবং সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততার জন্য প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে গণ-সংযোগের কাজ চলছে।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, উদ্বোধন করবেন খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এ্যাডঃ শফিকুল আলম মনা, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ শফিকুল আলম তুহিন। সভাপতিত্ব করবেন দৌলতপুর থানা বিএনপি’র আহবায়ক মুর্শিদ কামাল।

এদিকে দলের একটি সূত্র জানায়, সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হলেও সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কিছুটা সংশয় রয়েছে কারণ।

প্রথমতঃ খুলনা বিভাগের মহানগর এবং জেলা কমিটির সম্মেলন দ্রুত সম্পন্নের ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিল’র সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা আমান উল্লাহ আমানকে । মহানগর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষিত থানা সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তার সম্মতি আছে কিনা জানা যায়নি।

দ্বিতীয়তঃ বুধবার (২৭শে নভেম্বর) দুপুরে নগরীর হাজী মহসিন রোডের দলীয় কার্যালয় মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে তার অনুসারীদের নিয়ে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভা থেকে নিয়ম বহির্ভূত সকল ওয়ার্ড কমিটি বাতিলসহ খুলনা মহানগরী ও জেলার নতুন আহবায়ক কমিটি গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!